রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ গাজিপুর নিবার্চনের পরেই যা ঘটতে চলেছে দেশে?

আন্দোলন শুরুর আগে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের চেষ্টা করছে বিএনপি। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী ২৬ জুন গাজীপুর নির্বাচনের পর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে দলটি। তবে এবার শুধু ২০ দলীয় জোট নয়, ‘নূন্যতম ইস্যুতে’ বৃহত্তর জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে কথা বলেছে দলটি। এ ধরনের আলাপ-আলোচনার কথা স্বীকার করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নূন্যতম ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই।’ নূন্যতম ইস্যু কি জানতে চাওয়া হলে এই নেতা বলেন, ‘নূন্যতম ইস্যু হলো একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।’ তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমরা মোটামুটি তিনটি ইস্যুতে একটি আন্দোলনের অভিন্ন প্লাটফরম করতে চাই। এই প্লাটফরমে আমরা আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক শক্তিকে আনতে চাই।’ এই তিনটি ইস্যু হলো, তাঁর মতে, ১. অবিলম্বে সংসদ ভেঙ্গে নিয়ে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, ২. বেগম জিয়া সহ আটক সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি এবং হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ৩. সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে বিনা বিচারে হত্যা বন্ধ করা।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, এই তিন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্যে বিএনপি ইতিমধ্যে অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা, কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আ. স. ম. আবদুর রবের জে. এস. ডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এবং বাম মোর্চার সঙ্গে কথা বলেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে এইসব দল ও জোটের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা বলেছেন ‘গাজীপুর নির্বাচনের যে ঘটনা প্রবাহ দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে খুলনার মতো গাজীপুরেও কৌশলে আওয়ামী লীগ জয় ছিনিয়ে নেবে।’ ঐ নেতা মনে করেন, ‘গাজীপুর নির্বাচনই হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট। ওখানে কারচুপি হবার পর আমরা বসে থাকবো না।’

কিন্তু ঐ আন্দোলনের আগে বিএনপি রাজনীতির মাঠ গরম করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলতে চায়। বিএনপির মতে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ‘সংলাপ’ রাজনীতিতে বিএনপির ইতিবাচক ঘটনা হতে হবে। এখান থেকে ধাপে ধাপে সরকার পতনের আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চায় দলটি। প্রাথমিক আলাপ-আলোচনায় সবাই তিন ইস্যুতে যুগপৎ বা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নীতিগত ভাবে সম্মত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিএনপি-জামাত সম্পর্ক নিয়ে। কাদের সিদ্দিকী এবং বাম মোর্চা মির্জা ফখরুলকে জানিয়ে দিয়েছে যে, জামাত জোটে থাকলে বিএনপির সাথে যুগপৎ বা ঐক্যবদ্ধ কোনো আন্দোলনই করা সম্ভব হবে না। বিএনপি মহাসচিব তাদের আশ্বস্ত করেছেন, এই তিন ইস্যুতে যে আন্দোলন হবে তাতে বিএনপি একক ভাবে থাকবে। ২০ দলের কিছু দল থাকলেও তাতে জামাত থাকবে না। শেষ পর্যন্ত বিএনপি আলাদা মোর্চা করতে পারুক আর না পারুক, সরকারের বিরুদ্ধে যে রাজনীতির নতুন মেরুকরণের চেষ্টা চলছে, তা এখন দৃশ্যমান।